
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাই সম্প্রতি এই প্রযুক্তি প্রাথমিকভাবে চালুর ঘোষণা দেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
এক ব্লগপোস্টে তিনি জানান, আপাতত কয়েকজন বিশ্বস্ত পরীক্ষকের জন্য এই পরিষেবা চালু করা হবে। আসন্ন কয়েক সপ্তাহে এটি সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত হবে।
এর আগেই অবশ্য এক অনুষ্ঠানে চ্যাটবট আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেছিলেন পিচাই। তখন তিনি জানান, ২০২২ সালের প্রথম দিক থেকেই গুগল তার এআই চ্যাটবট তৈরি করছে এবং এ নিয়ে গুগলের বড় পরিকল্পনা রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য গুগলের প্রথম এআই চ্যাটবট হবে ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ফর ডায়ালগ অ্যাপ্লিকেশনস (এলএএমডিএ) বা ল্যামডা। গুগলের চ্যাটবটের নাম দেয়া হয়েছে গুগল বার্ড। এই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটি তৈরি হয়েছিল ২০২১ সালে।
ব্লগপোস্টে পিচাই লিখেছেন, সৃজনশীলতা এবং কৌতূহলের জন্য একটি লঞ্চপ্যাড হতে পারে বার্ড এআই। যা আপনাকে ৯ বছর বয়সী একজনকে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে নতুন আবিষ্কারগুলো ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। এই মুহূর্তে ফুটবলের সেরা স্ট্রাইকাদের সম্পর্কে জানাতে পারে এবং তারপর অনুশীলনের মাধ্যমে আপনার দক্ষতাও বাড়াতে পারে।
তিনি লিখেছেন, খুব শিগগিরই আপনি গুগল সার্চে এআই পাওয়ার্ড বৈশিষ্ট্যগুলো দেখতে পাবেন। এই নতুন বৈশিষ্ট্যগুলো শিগগিরই সার্চে শুরু হবে।
গত বছরের নভেম্বরে আসে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রিসার্চ কোম্পানি ওপেন এআইয়ের চ্যাটবট চ্যাটজিপি। মানুষের কথা বলার ভাষা বুঝতে পারে এই এআই চ্যাটবটটি। সহজ ভাষায় বলতে গেলে গুগলে যেমন অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলে খুব সহজেই, সেই সহজ ব্যবস্থাটি আরও সহজ ও উন্নত হয়ে এসেছে চ্যাটবট চ্যাটজিপিটিতে।
বিশ্বের প্রচুর ডেটা সংগ্রহ করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টেক্সট ফরম্যাটে জানায় এই প্রযুক্তি। এই চ্যাটবট ব্যবহার করতে ওয়েবসাইটে ঢুকে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর সহজেই ব্যবহার করে এর মাধ্যমে সেবা পাওয়া যাবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, চ্যাট জিপিটিকে প্রশ্ন করা হলে মানুষের মতোই উত্তর দিতে পারে। এমনকি এই চ্যাটবটকে যদি কেউ কবিতা লিখতেও বলেন, তাও লেখে দেবে। সার্চ টুল দিয়ে দেবে পরীক্ষাও।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড্যান গিলমোর চ্যাট জিপিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে একটি অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে দিয়েছিলেন। ছাত্রদেরও একই অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলেন তিনি। বেশ ভালো ফল দিয়েছে চ্যাট জিপিটি।
অ্যাসাইনমেন্ট দেখে গিলমোর বলেন, ‘আমি এই চ্যাটবটকে অবশ্যই ভালো নম্বর দেব।’
ওপেন এআই নতুন সংস্করণের চ্যাটবট প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছে, সংলাপের ধরন বুঝে ফলোআপ প্রশ্নের উত্তর দেয়া, ভুল স্বীকার করা, ভুল বা ত্রুটিপূর্ণ বিষয়কে চ্যালেঞ্জ করা এবং অনুপযুক্ত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার মতো কাজ করতে দক্ষ হয়ে উঠেছে চ্যাটবটটি।
ইন্টারনেটে থাকা ওয়েব পেজ, ওয়েব টেক্সট, বই, উইকিপিডিয়া, আর্টিকেলসহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রায় ৫৭০ জিবির বেশি ডাটা সমৃদ্ধ চ্যাটজিপিটি। শুধু তাই নয় এই চ্যাটবটে রয়েছে ৩০০ বিলিয়ন শব্দের ভান্ডার। পাশাপাশি একটি বাক্যের পরবর্তী শব্দটি কী হওয়া উচিত তা অনুমান করতেও সক্ষম চ্যাটজিপিটি।
তবে অনেক সুবিধা থাকলেও চ্যাট জিপিটির মাধ্যমে মূলত টেক্সট রেজাল্ট পাওয়া যায়। ভিডিও বা ভিজ্যুয়াল রেজাল্ট আসে না। এসব বিষয়ে আরও কাজ চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সার্বিক পরিস্থিতিতে চ্যাটজিপিটি মাথা ব্যথা বাড়িয়েছে সার্চ ইঞ্জিন সংস্থাগুলোর মধ্যে মোট আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ পাওয়া সার্চ ইঞ্জিন গুগলের। প্রতিযোগিতায় টিকতে গুগলও এবার আরও সমৃদ্ধ চ্যাটবট তৈরির পথে এগোচ্ছে।