বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ।। আপনার স্থান দখল করছে

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ।। আপনার স্থান দখল করছে

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ।। আপনার স্থান দখল করছে
গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সা, সিরি এসরের নাম শুনে থাকবেন। এসব আজকের তথ্যপ্রযুক্তির জামানায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধি) সম্পন্ন হেল্পার বা স্মার্ট সহায়কের নাম। শারীরিক অস্তিত্বহীন এই অ্যাসিস্ট্যান্ট শুধু গ্রাহকের কমান্ড মেনে কাজই করে না, আগে থেকে বলে রাখা হুইপ যথাসময়ে সঠিকভাবে করে রাখে। আবার সেই কাজ সুসম্পন্ন হয়ে গেলে অতীতের করে আসা কাজ সম্পর্কিত কিছু করতে হবে না কি না তাও প্রভুকে জিজ্ঞাসা করে নেয়। অর্থাৎ, গ্রাহকের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ। আর এ সবই করে তার নিজের বুদ্ধি বা মেধা খাটিয়ে। নিউরোন বা স্নায়ু দ্বারা গঠিত কোনো রক্ত মাংসের ব্রেন নয়, প্রযুক্তি বা মাইক্রো চিপ দিয়ে তৈরি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) সাহায্যে। বাংলায় কৃত্রিম মেধা। বাংলাদেশে যখন সোফিয়া রোবটের আগমন হয় তখন কমবেশি সবাই এআই-এর নাম শুনেছে।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?
প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে মেশিনকে বুদ্ধিমান করে তোলাই হলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম মেধা। এটি হলো এক ধরনের সফটওয়্যার টেকনোলজি, যা রোবট বা কম্পিউটারকে মানুষের মতো কাজ করায় এবং ভাবায়। যেমন, কারও কথা বুঝতে পারা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, দেখে চিনতে পারা ইত্যাদি ইত্যাদি। এক কথায় মেশিন লার্নিং।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, কৃত্রিম মেধার সুবাদে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের থেকে ভালো পরিষেবা দিতে পারবে যন্ত্র। মানুষের অনেক কাজ করবে তারা। আজকের প্রজন্ম তাদের স্মার্ট ফোনে এআই প্রযুক্তিনির্ভর গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা সিরিকে ব্যবহার করছে। চ্যাটিং করতে হলে আর কষ্ট করে টাইপ করতে হচ্ছে না। মুখে বলে দিলেই অ্যাসিস্ট্যান্ট তা লেখায় রূপ দিয়ে দিচ্ছে। তা ইংরেজি, ফারসি বা বাংলা যে ভাষাতেই হোক না কেন। বন্ধুর নাম বলে ফোন কর বলতেই, তার সঙ্গে ফোন কানেক্ট করে দিচ্ছে। অ্যালেক্সা একটি গান শোনাও বললে সে জিজ্ঞাসা করছে কোন গান, কি গান, কার গাওয়া ইত্যাদি। তাই বলে শুধু স্মার্ট ফোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এ আইয়ের দাপট।

স্মার্ট গাড়ি ও ড্রোন : স্বয়ংক্রিয় তথা চালকহীন গাড়ির স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ দিয়েছে এআই। সেক্ষেত্রে নজির তৈরি করেছে মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা টেসলা। এআই নির্ভর এই গাড়ি বুঝতে পারে কি করে, কখন ব্রেক মারতে হয়, কিভাবে বদলাতে হয় রাস্তার লেন এবং কিভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে হয়। এছাড়া নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে এই গাড়ি ঘুরতে এবং ম্যাপ ব্যবহারও করতে পারে। বর্তমানে আমেরিকাতে ৫০ হাজারেরও বেশি টেসলার এই গাড়ি চলছে। আবার অ্যামাজন ও ওয়ালমার্টের মতো বহুজাতিক সংস্থা তাদের পণ্য গ্রাহকের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার কাজে ড্রোন ব্যবহার করছে। একইভাবে মাল পরিবহনের জন্য ব্রিটেনে স্বয়ংক্রিয় ট্রাক পরিষেবার কাজ শুরু করেছে ব্রিটেনের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি)।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট : আমরা ফেসবুক, ট্যুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা শেয়ার চ্যাটের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলেও বুঝতে পারি না কিভাবে একের পর এক আপডেট আমাদের কাছে আসছে! তা সে পরিচিত ব্যক্তিকে খোঁজাই হোক বা ফ্রেন্ডস সাজেশান। একটা কিছু লাইক, শেয়ার করলেই সেই সম্পর্কিত আরেকটা নিমেষে হাজির হয়ে যায়। সবকিছুই গ্রাহকের অচিরে হচ্ছে কৃত্রিম মেধার দৌলতে। আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা, মেলামেশা ইত্যাদি বুঝে ‘কাস্টমাইজড’ (ব্যক্তি বিশেষের জন্য নির্দিষ্ট) আপডেট পাঠাতে থাকে এআই প্রযুক্তি।
মিউজিক ও মিডিয়া : কেউ যখন স্পটিফাই, নেটফ্লিক্স বা ইউ টিউব ব্যবহার করে, গ্রাহকের জন্য পুরো সিদ্ধান্তই নেয় এআই। একজন যদি মনে করে সে বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করছে বা তার নিয়ন্ত্রণে পুরো মিডিয়া চলছে, তা একেবারে ভুল। কারণ, একটি গান শুনতে শুনতে বা একজন শিল্পীকে খোঁজার সময় ‘রিলেটেড’ বা ‘সাজেস্টেড’ গান বা শিল্পী চলে আসে। একইভাবে আজকের জনপ্রিয় পাবজি, সিএস গো বা ফোর্টনাইট-এর মতো উন্নত ভিডিও গেমে এআই ব্যবহার সফল।
অনলাইন বিজ্ঞাপন : এআই প্রযুক্তির একটা বড় গ্রাহক হল অনলাইন বিজ্ঞাপন সেক্টর। এ ক্ষেত্রে এআই শুধু ইন্টারনেট সার্চকারী ব্যক্তিদের উপর নজর রেখে তথ্য তল্লাশি করে তাই নয়, গ্রাহকদের পছন্দ-অপছন্দ বিচার করে সেইমতো তাদের সামনে বিজ্ঞাপন হাজির করে। ফলে বিশ্বব্যাপী অনলাইন বিজ্ঞাপনের ব্যবসা ২৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
নেভিগেশন এবং ট্রাভেল : ম্যাপের পুরোটাই এআই প্রযুক্তিচালিত। যখন গুগল, অ্যাপেল বা অন্য সংস্থার ম্যাপ ব্যবহার করে আমরা ক্যাব বুকিং করি, তখন এআই বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রাস্তার সেই সময়ের যানজট বা ভাড়া সম্পর্কে আমাদের জানায়।
ব্যাংক পরিষেবা : বর্তমানে ব্যাংকিং পরিষেবার একটা বড় অংশ কৃত্রিম মেধা। কোনো একটা লেনদেন করলে আমরা তৎক্ষণাৎ যে এসএমএস বা ইমেল অ্যালার্ট পাই, তা চালনা কার এই এআই প্রযুক্তি। এভাবে প্রতিটি গ্রাহকের লেনদেন, লগ্নি, প্রতারণা রোধে নীরবে কাজ করছে এআই।
স্মার্ট হোম ডিভাইস : নিত্যদিনের ব্যবহার্য স্মার্ট হোম ডিভাইস বা যন্ত্রগুলোতে ব্যাপকভবে ব্যবহার হচ্ছে এআই। আমাদের ব্যবহার, পছন্দ-অপছন্দ বুঝে সেই প্রযুক্তি নিজেই সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের সেটিংস পরিবর্তন করছে এবং গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আগেই গুগলের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, স্মার্ট টিভি, স্মার্ট রেফ্রিজেরাটর, স্মার্ট এসি, স্মার্ট মাইক্রোওয়েভের কথা উল্লেখ করা যায়।
নিরাপত্তা ও নজরদারি : এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি কৃত্রিম মেধা ব্যবহার হচ্ছে এক্ষেত্রে। ড্রোন তো ছেড়েই দেওয়া যাক। নজরদারির কাজে বিভিন্ন পয়েন্টে লাগানো হাজার হাজার ক্যামেরা থেকে লাখ লাখ তথ্য একটা নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্লেষণ করা এআই ছাড়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এআই নির্ভর অবজেক্ট রিকগনিশন বা ফেস রিকগনিশনের মতো প্রযুক্তি প্রতিদিন উন্নত হচ্ছে।
বিজনেস ম্যানেজমেন্ট : আজকের জনপ্রিয় অনলাইনে কেনাকাটা বা ই-কমার্সে ব্যবহার হচ্ছে এআই। যার জেরে গ্রাহক ঠিক কি চইছে সেই পণ্য দ্রুত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। একঝাঁক পণ্য বা পরিষেবার মধ্যে থেকে বেছে বেছে গ্রাহকের সামনে তুলে ধরা। আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা, মেলামেশা ইত্যাদি বুঝে ‘কাস্টমাইজড’ (ব্যক্তি বিশেষের জন্য নির্দিষ্ট) আপডেট পাঠাতে থাকে এআই প্রযুক্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *